কুরআনে পানিচক্র
#কুরআনে_বিজ্ঞান
#বিজ্ঞানময়_কুরআন
#পানিচক্র
পানিচক্রের ধাপগুলো হচ্ছে—
১) বাষ্পীভবন
২) মেঘ উপন্ন হওয়া
৩) বৃষ্টিপাত হওয়া
৪) বৃষ্টির পানি ভূমিতে আসা ও ভূমি কর্তৃক এই পানি ধারণ
এরপর আবার প্রথম থেকে প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি হয়। এভাবে প্রক্রিয়াগুলোর চক্রাকারে পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে পানিচক্র চলতে থাকে।
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভাণ্ডার নেই।” [1] - [1] আল কুরআন, হিজর ১৫:২২
আলোচ্য আয়াতে বৃষ্টিপাতের পূর্বে “বৃষ্টিগর্ভ বায়ু” পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এমন বায়ু যা বৃষ্টিকে ধারণ করে। এটি নিঃসন্দেহে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার নির্দেশক।
অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“শপথ আসমানের, যা ধারণ করে বৃষ্টি।” [2] - আল কুরআন, তারিক ৮৬:১১
এই আয়াতের তাফসিরে ইমাম শাওকানী(র) এর ‘ফাতহুল কাদির’ গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ “বৃষ্টিকে প্রত্যাবর্তনকারী বলার আর একটি কারণ এটাও হতে পারে পৃথিবীর সমুদ্রগুলো থেকে পানি বাষ্পের আকারে উঠে যায়। আবার এই বাষ্পই পানির আকারে পৃথিবীতে বর্ষিত হয়।” [3] - সূত্রঃ কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, ২য় খণ্ড, সুরা তারিকের ১১নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৮০৭
পানিচক্রে বাষ্পীভবনের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে তা থেকে মেঘ উৎপন্ন হওয়া। এরপর ঘনীভুত মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয়।আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টিধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব - যাতে তোমরা চিন্তা কর।” [4]- আল কুরআন, আ’রাফ ৭:৫৭
“আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূখণ্ডের দিকে পরিচালিত করি। অতঃপর এর দ্বারা সে ভূখণ্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবে হবে পুনরুত্থান।” [5]- আল কুরআন, ফাতির ৩৫:৯
আয়াতে বলা হচ্ছে - বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। পানিচক্রের ২য় ধাপ মেঘ উৎপন্ন হওয়ার ব্যাপারেও কুরআন এভাবে আলোচনা করেছে। শুধু তাই নয়, মেঘ উৎপন্ন হওয়া, শিলা তৈরি ও বৃষ্টিপাতের ব্যাপারে কুরআন এমন অসামান্য সব তথ্য দিয়েছে যা সম্পর্কে দেড় হাজার বছর আগের বিজ্ঞান ছিল সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
“তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। আর তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তূপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন। এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়।” [6] - আল কুরআন, নুর ২৪:৪৩
আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে—ছোট মেঘখণ্ডকে বাতাস যখন ধাক্কা দেয় তখন Cumulonimbus বা “বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ” নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তৈরি হতে শুরু করে। ছোট ছোট মেঘখণ্ড একসাথে মিলিত হয়ে বড় মেঘমালায় পরিণত হয়। [7]- ,সূত্র- The Atmosphere, Anthes and others, p. 268-269, এবং Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141.
যখন ছোট ছোট মেঘখণ্ড একত্রে মিলিত হয় তখন তা উঁচু হয়ে যায়। উড্ডয়মান বাতাসের গতি মেঘের আকার বৃদ্ধি করে মেঘকে স্তূপীকৃত করতে সাহায্য করে। এই মেঘের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মেঘটি বায়ুমণ্ডলের অধিকতর ঠাণ্ডা স্থানের দিকে বিস্তৃতি লাভ করে সেখানে পানির ফোটা ও বরফের সৃষ্টি করে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এরপর যখনই এগুলো অধিক ওজন বিশিষ্ট হয়ে যায় তখন বাতাস আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে, মেঘমালা থেকে তা বৃষ্টি ও শিলা হিসেবে বর্ষিত হয়। [8]দেখুন, The Atmosphere, Anthes and others, p. 269, এবং Elements of Meteorology, Miller and Thompson, pp. 141-142.
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, cumulonimbus তথা বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ, যা থেকে শিলা-বৃষ্টি বর্ষিত হয়— তার উচ্চতা ২৫০০০ থেকে ৩০০০০ ফুট (৪.৭ থেকে ৫.৭ মাইল) পর্যন্ত হয়ে থাকে। [9] তাকে পাহাড়ের মতই দেখায় যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজিদে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: ﴿وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ جِبَالٍ﴾ অর্থাৎ “আর তিনি আকাশস্থিত পাহাড় (শিলাস্তূপ) থেকে শিলা বর্ষণ করেন।”
মেঘ উৎপন্ন হওয়া ও বৃষ্টিপাত—পানিচক্রের এই দু’টি ধাপ আমরা কুরআন থেকে দেখলাম। বৃষ্টির পানি ভূমিতে আসা ও ভূমি কর্তৃক এই পানি ধারণ সম্পর্কে কুরআন যা বলে—
“আমি[আল্লাহ] আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমিতভাবে; অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম।” [10]-আল কুরআন, মু’মিনুন ২৩:১৮
“তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।” [11]- আল কুরআন, নাহল ১৬:১০
“তুমি কি দেখোনি যে আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর এর দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে ” [12]- আল কুরআন, যুমার ৩৯:২১
“তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন। ফলে উপত্যকাসমূহ তাদের পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তার উপরের আবর্জনা বহন করে।এরূপে আবর্জনা উপরে আসে যখন অলঙ্কার বা তৈজসপত্র নির্মাণের উদ্যেশ্যে কিছুকে আগুনে উত্তপ্ত করা হয়। এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন। যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। এভাবে আল্লাহ উপমা দিয়ে থাকেন।” [13]- আল কুরআন, রা’দ ১৩:১৭
কুরআনের আয়াতগুলো থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে পানিচক্রের সবগুলো ধাপই অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ২জন বিশেষজ্ঞ জি গাসটানী ও বি ব্লাভোক্স বিশ্বকোষে (ইউনিভার্সালিস এনসাইক্লোপিডিয়া) প্রাচীনকালের পানিচক্র বিষয়ক মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা বলেছেন - প্লেটো বিশ্বাস করতেন যে মাটির নিচে কোন গভীর সুরঙ্গপথ (টারটারাস) দিয়ে পানি মাটির নিচ থেকে সাগরে ফিরে যায়। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ মতবাদের অনেক সমর্থক ছিলেন এবং তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ডেসকার্টেস। এরিস্টোটল মনে করতেন যে, মাটির নিচের পানি বাষ্প হয়ে পাহাড়ী এলাকার ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে ভূগর্ভে হ্রদ সৃষ্টি করে থাকে এবং সেই পানিই ঝর্ণার আকারে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ মতবাদ সেনেকা (১ম শতাব্দী) ও ভলগার এবং আরো অনেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত পোষণ করতেন। ১৫৮০ সালে বার্নার্ড পালিসি পানির গতিচক্র সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা গঠন করেন। তিনি বলেন যে, মাটির নিচে যে পানি আছে তা উপর থেকে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে আসা। সপ্তদশ শতকে ম্যারিওট এবং পি পেরোন্ট এ মতবাদ সমর্থন ও অনুমোদন করেন। [14]-‘বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান’ – ড. মরিস বুকাইলি (প্রীতি প্রকাশন) পৃষ্ঠা ১৭০-১৭১
আল কুরআনে বর্ণিত আয়াতগুলোতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সময়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলোর লেশমাত্রও নেই।
এখানে আমরা দেখতে পেলাম বিজ্ঞানীরা যেটা মাত্র কয়েকশ বছর আগে সেটি কোরআন বলেছে ১৪০০ বছর আগে।এটি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কে বলতে পারে ?
Credit - Responce to anti Islam
কোন মন্তব্য নেই