বাস,ট্রেনে চড়াও কি বিদআত ?
প্রথমে আমাদের জানতে হবে সুন্নাত বিদআত আর হালাল হারামের পার্থক্য। সুন্নাত বিদআত হলো ইবাদতের বিষয় আর হালাল হারাম হলো দুনিয়াবী বিষয়।ইবাদতের মধ্যে নতুন আবিস্কার হলো বিদআত,ইবাদত করতে হলে দলিল দিয়েই করতে হবে,দলিলের বাহিরে গিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ইবাদত করলে সেটি বিদআত হবে। আর দুনিয়াবী বিষয়ের মধ্যে যেগুলোকে শরিয়তে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোই শুধু হারাম বাকি সব হালাল,যেমন কুরআনে আছে শুকর হারাম,মৃত প্রানী হারাম ইত্যাদি, এখন পিজ্জা খাওয়া হারাম নাকি হালাল?কেক খাওয়া হালাল নাকি হারাম? এটা দেখতে হলে আমাদের দেখতে হবে শরিয়তের কোথাও কি কেক বা পিজ্জা খাওয়াকে হারাম করা হয়েছে?-না। এই খাবারগুলোতে কি এমন কিছু আছে (যেমন-শুকরের মাংস)?-না। শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম এমন কোন উপাদান কেক বা পিজ্জায় থাকলে সেটি হারাম হবে। তবে যদি শরিয়তের দৃষ্টিতে যেটি হারাম নয় এমন উপাদন থাকলে হালাল।হারাম উপাদান নেই এমন কিয়ামত পর্যন্ত যত খাবার আবিস্কার হবে সব হালাল।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, দুনিয়ার বিষয়গুলো সবই হালাল শুধু সেগুলোই হারাম যেগুলো শরিয়তে হারাম করা হয়েছে।
শরীআর দৃষ্টিতে ওটাকে বিদ’আত বলা হয় যা দ্বীনের মধ্যে বা ইবাদতের মধ্যে নতুন আবিস্কার ৷ অতএব দুনিয়াবী আবিষ্কার যেমন বাস, ট্রেন, উড়োজাহাজ, পানি জাহাজ প্রভৃতিতে চড়া বিদ’আত নয়। কারণ এগুলোতে চড়ার মাধ্যমে কেউ সাওয়াবের আশা করে না। দুঃখের বিষয় হলেও অতি সত্যকথা যে, আমরা ‘ইবাদাত করতে এত ব্যস্ত যে, ঐ ‘ইবাদাতটি নবীর তরীকা মুতাবিক হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করারও সময় নেই ৷ এজন্যই অজান্তে দেদারসে এমন কিছু ‘আমাল সাওয়াব পাওয়ার নিমিত্তে করে যাচ্ছি যেগুলি জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। যেমনঃ মীলাদ, শবে বরাত, চল্লিশা, খতমে জালালী, খতমে ইউনুস, কুরআন খানি, ফাতিহা খানি, শবীনা খতম, দরুদে তাজ, দরুদে লাক্ষী, দু‘আয়ে গাঞ্জুল আরশ, কুম কুম ইয়া হাবীবা ওযীফা, উরস, কবরে চাদর দেয়া, কবর পাকা করা, কবরের উপর লেখা, তাতে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা, সেখানে আগর বাতি-মোমবাতি জ্বালানো, সেখানে নযরানা পেশ করা, মুখে নিয়্যাতের গদ উচ্চারণ করা (নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া ----- বলে), ফরজ সালাতান্তে, জানাযা সালাতান্তে সস্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা প্রভৃতি। এগুলো এমন ‘আমাল যার মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরীকা বিদ্যমান না থাকায় নিঃসন্দেহে বিদ’আত- যার পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নয়। অনেকে বলে থাকেন, বুঝলাম এগুলো বিদ’আত কিন্তু বিদ’আত তো দুই প্রকার-
(১) বিদ‘আতে হাসানাহ (উত্তম বিদ‘আত)
(২) বিদ‘আতে সায়্যিআহ (মন্দ বিদ‘আত)। অতএব এগুলো বিদ‘আত হলেও মন্দ বিদ‘আত নয় বরং উত্তম বিদ‘আত। তাই বলি : বিদ‘আতকে উক্ত দুই ভাগে ভাগ করাও একটি বিদ‘আত। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বিদ‘আতের এই বিভাজন আদৌ প্রমাণিত নেই। বরং তিনি সমস্ত বিদ‘আতকে ভ্রষ্টতা বলেছেন- (নাসায়ী ৩/১৮৮-১৮৯, ইবনু খুযাইমাহ হাঃ ১৭৮৫)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন : সমস্ত বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা যদিও মানুষ তাকে উত্তম মনে করে- (সলাতুত তারাবীহ- আলবানী ৮১ পৃষ্ঠা)।
মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়াবী বিষয়ে সকল বিষয়ই বৈধ বা হালাল, শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে যে সকল বস্তুকে হারাম করা হয়েছে সেগুলো ব্যতীত। আর ‘ইব৷দাতের ক্ষেত্রে সকল প্রকার ‘ইবাদাত হারাম বা অবৈধ শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহয় যেগুলোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেগুলো ব্যতীত। ‘আমাল সহীহ ও সুন্নাতী পদ্ধতিতে হবার জন্য ছয়টি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো হলো
(১) কারণ : (যেমন চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কারণে সালাত আছে কিন্তু আল্লাহ্র রসূল এর জন্ম বা মৃত্যূর কারণে কোন ‘ইবাদাত নেই, তাই সেখানে ‘ইবাদাত না করা)।
(২) প্রকার : (যত প্রকার মহিলাকে বিব৷হ করা হারাম তত প্রকার ব্যতীত অন্য সকল প্রকার নারীকে বিবাহ বৈধ, কিংবা যত প্রকারের জানোয়ার আল্লাহ্র রসূল কুরবানী করেছেন সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকা, যেমন আল্লাহ্র রসূল ঘোড়া কুরবানী করেননি বা মোরগ মুরগী কুরবানী করেননি তাই তা না করা)।
(৩) পরিমাণ : (যতটুকু করেছেন তারচেয়ে কম বা বেশী না করা, যেমন যুহরের চার রাকা‘আতে স্থলে ৩ বা ৫ করা যাবে না)।
(৪) সময় : (যে সময়ে করেছেন সে সময়ে করা, যেমন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা, যুহরের সালাতে ‘আসরের সময় আর ‘আসরের সালাত যুহরে আদায় না করা)।
(৫) স্থান : (যে স্থানে করেছেন, যেমন হাজ্জের মীকাত, মীনায় অবস্থান, ‘আরফায় অবস্থান, ফরজ সালাত মসজিদে আদায় ইত্যাদি)।
(৬) পদ্ধতি : (যে ভাবে করেছেন সেভাবেই করতে হবে, পদ্ধতি পরিবর্তন না করা)।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি ইবাদতের মধ্যে নতুন কোন ইবাদত করা হলো বিদআত।
সহিহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৬৯৭. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এ শরী‘আতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যাত।’ ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু জা‘ফর মাখরামী (রহ.) ও ‘আবদুল ওয়াহিদ ইবনু আবূ ‘আউন, সা‘দ ইবনু ইব্রাহীম (রহ.) হতে তা বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম ৩০/৮ হাঃ ১৭১৮, আহমাদ ২৬০৯২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
ইবাদত করতে হলে দলিল দিয়েই করতে হবে এর বাহিরে করলে সেটি বিদআত হবে আর দুনিয়ার বিষয়ে কোনকিছুকে হারাম প্রমাণ করতে দলিল দিয়ে করতে হবে।দুনিয়ার বিষয়ে যদি শরিয়তে হারাম বলা না থাকে তাহলে সেটি হালাল হবে।
ইবাদত করতে হলে -------------------------দলিল লাগবে
হারাম প্রমাণ করতে -------------------------দলিল লাগবে
বিদআত প্রমাণ করতে------------------------দলিল লাগবে না (কুরআন হাদিসে নেই বলেই বিদআত)
হালাল প্রমাণ করতে-------------------------- দলিল লাগবে না (শরিয়তে যেগুলো হারাম নয় সেগুলোই হালাল)
কোন মন্তব্য নেই