মোট পৃষ্ঠাদর্শন

ইসলামে দাসপ্রথা

 

Pray for the world economy

ইসলামে দাসপ্রথা

  

দাসপ্রথা — এই শব্দটি শুনলেই মনের আয়নায় ভেসে ওঠে একজন জাঁদরেল লোক অনেকগুলো দাসকে পেটাচ্ছে, কাজ করতে বাধ্য করছে, বৃদ্ধ বা নারী-শিশু কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না, আর এতে সেই লোক পাশবিক আনন্দ নিয়ে হাসছে, ইত্যাদি ছবি। দাসপ্রথা নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই চলছে বিতর্ক। এই সামাজিক ব্যাধি নিয়ে বিতর্কের কূল-কিনারা পাওয়া বেশ মুশকিল। তবে ইসলামকে আঘাত করার জন্য পূর্বের প্রাচ্যবিদ আর বর্তমানে খ্রিষ্টান মিশনারি, নাস্তিক-মুক্তমনা, আর কম্যুনিস্টদের অন্যতম এক হাতিয়ার হলো দাসপ্রথা ও ইসলামের সম্পর্ক। তারা তাদের কথার মাধ্যমে সন্দেহের বীজ বুনে দিতে চায়, যাতে মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সন্দিহান করা যায়। এর ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে প্রাচ্যবিদদের দ্বারা, যারা রাসুলুল্লাহর (ﷺ) জীবনী লেখার নামে তাঁর (ﷺ) বিরুদ্ধে অতীব সুকৌশলে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে। J.J. Pool, William Muir এসব কুখ্যাতদের নাম এইক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। তাদের যোগ্য উত্তরসূরী খ্রিষ্টান মিশনারি আর নাস্তিক-মুক্তমনা এবং সামন্তবাদী কম্যুনিস্ট। ইসলামকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আঘাত করার জন্যে যাদের খুব বিখ্যাত চাল হলো, ইসলামের দাসপ্রথা। এদের জবাবের আগে অতি সংক্ষেপে দাসপ্রথার ইতিহাস জেনে নেয়া যাক।

 

দাসপ্রথা ও ইসলাম :

প্রাচীন রোম আর গ্রীসে দাসপ্রথার জঘন্যতম পাশবিকতার বর্ণনা দেওয়া আসলেই কঠিন। তারা সারা বছরই ধন-সম্পদের লোভে যুদ্ধে লেগে থাকতো। যুদ্ধে জয়ী হলে তারা নারী-পুরুষ সবাইকে দাস বানিয়ে পশুর মতো খাটাতো আর নারীদেরকে ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করতো। তাদের জীবনের অন্যতম ভোগ্য বস্তুই ছিলো নারী। দাসরা তাদের প্রভুর ওপর সামগ্রিকভাবে নির্ভর করতো পিতার মতোই। এমনকি কোনো প্রভুরা দাসদের নিজেদের সন্তান বলে পরিচয় দিতো, যাকে গ্রীক ভাষায় পাই এবং ল্যাটিন ভাষায় পুয়ের বলা হতো।[1] দাসদের সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হতো না। সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য তাদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার নিপীড়নও চলতো। সামান্য কাচের দামী পানপাত্র ভেঙ্গে ফেলার অপরাধে তাদেরকে কখনো কখনো ছেড়ে দেয়া হতো হিংস্র সব মাছভর্তি চৌবাচ্চায়।[2] কখনো কখনো রোমান দর্শকদেরকে আনন্দ দানের জন্য দাসদেরকে বা যুদ্ধবন্দীদেরকে ভয়ানক হিংস্র প্রাণীর সাথে বা কখনো মারাত্মক অপরাধীদের সাথে লড়তে বাধ্য করা হতো, যাদেরকে গ্ল্যাডিয়েটর বলা হতো।[3] দুর্ভিক্ষের দিনে খাবার বাঁচানোর জন্যে গ্ল্যাডিয়েটরদেরকে নগর থেকে বিতাড়িত করা হতো। তাদেরকে মানুষ বলেই বিবেচনা করা হতো না। আর তাই দাসদের কোনো প্রকার মানবিক অধিকার ছিলো না। তাদের ওপর অমানবিক ও পাশবিক অত্যাচারের তালিকা অনেক বড়, যা বর্ণনা করা মূলত এখানে উদ্দেশ্য নয়।

 

মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক। ইসলাম কেন দাসপ্রথাকে সমর্থন করে বা এই ধরনের হাজারো প্রশ্নের আগে চলুন একটু ঘুরে আসি ইসলামপূর্ব যুগে। সেই সময়ে দাসপ্রথার কী অবস্থা ছিলো?

 

সেই সময়ে কয়েক উপায়ে দাস বানানো যেতো:

 

(১) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো, তাহলে তাকে দাস বানানো হতো;

(২) অভাবের তাড়নায় বাবা-মা সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য ধনীদের কাছে দিয়ে দিতো আর ক্রয়কারীরা তাদেরকে দাস করে রাখতো নিজেদের কাছে;

(৩) যেহেতু অবকাঠামোগত তেমন সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান ছিল না, তাই অর্থনৈতিক কারণে সমাজের অনগ্রসর ব্যক্তিরা নিজেদেরকে সমাজের অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দাস হয়ে যেতো;

(৪) ছিনতাই বা অপহরণের মাধ্যমে কাউকে বন্দি করে দাস বানানো;

(৫) অভিজাত শ্রেণির লোকদের সাথে অসদ্ব্যবহার করার জন্যে কাউকে দাস বানানো;

(৬) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যুদ্ধ-বিগ্রহ। আরবে সবসময় গোত্রভিত্তিক যুদ্ধ লেগেই থাকতো। এই সময়ে যুদ্ধের কারণে বিজিত জাতির নারী-পুরুষকে অনিবার্যভাবে দাস হয়ে যেতে হতো। মূলত যুদ্ধই প্রাচীনকাল থেকে দাস হওয়ার মূল কারণ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। হোক তা গ্রীক, রোমান, আরবীয় বা ভারতীয় সমাজ।

 

ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাস-দাসী রাখা বা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো, বলা যেতে পারে সেই সময়কার সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো এই দাসপ্রথা। এটি এমন এক ব্যাপার ছিলো, যা কেউই অপছন্দ করতো না বা একে পরিবর্তনের চিন্তাও করতো না। সেই সময়ে তা ছিলো সভ্যতার একেবারে অস্থি-মজ্জাগত বিষয়, যাকে একেবারে উচ্ছেদ করা সম্ভব ছিলো না। এই কারণে অনেকে অভিযোগ করেন যে, কেন ইসলাম দাসপ্রথাকে একেবারে গোড়া থেকেই উচ্ছেদ করে দেয়নি। যেখানে মদ খাওয়াকে ধীরে ধীরে হারাম করা হয়েছে, দাসপ্রথাকে কেন পর্যায়ক্রমিকভাবে একেবারে হারাম করে দেয়া হয়নি?

 

সেসময়ে আরবের লোকেরা ছিলো মদের জন্য পাগলপ্রায়। তবে মদ যতোটা তাদের সংস্কৃতির অংশ ছিলো, তার তুলনায় দাসব্যবস্থার প্রভাব ও প্রসার ছিলো আরো অনেক বেশি সূদুরপ্রসারী। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক— অনেকদিক থেকেই দাসপ্রথার সুগভীর প্রভাব বিদ্যমান ছিলো। তাই ইসলাম দাসব্যবস্থাকে একেবারে বিলুপ্ত না করে বরং কিছু অভূতপূর্ব বাস্তবমুখী নিয়মে দাসদের মুক্ত করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে বা কখনো আবশ্যক করেছে। সাথে সাথে দাস বানানোর (Enslaving) সকল প্রথাকে বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র একটি উপায়কে উন্মুক্ত রেখেছে, যা নিয়ে একটু পরেই আলোচনা আসছে। তার আগে ইসলাম কী কী উপায়ে দাসমুক্তির ব্যবস্থা করেছে তা আলোচনা করা হবে।

 

ইসলামে দাসমুক্তির উপায় :

ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা যার অর্থই হল বিশ্বজগতের এক এবং একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট নিজেকে সমর্পণ করা। প্রতিটি মানুষই আল্লাহর দাস বা গোলাম, যিনি তার স্রষ্টা ও পালনকর্তা। গর্ভধারিণী মায়ের থেকেও যিনি তাঁর দাসকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। ইসলামের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো প্রতিটি মানুষ —হোক সে ধনী বা গরীব, বড় বা ছোট, স্বাধীন বা দাস, সে যে পর্যায়েরই হোক না কেন— সকলকে সর্বপ্রকার মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্বমনা করতে পারা। সকল প্রকার গোলামির পিঞ্জর থেকে বের করে এনে, তাওহিদ ও ইসলামের ছায়াতলে এনে আল্লাহর দাস হিসেবে নিজেকে চিনতে পারাই দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রথম উপায়। হয়তো শারীরিক দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য আব্রাহাম লিংকন চুক্তি করেছিলো। তবে সত্যিকারের দাসত্ব থেকে মুক্তি মেলেনি। ইসলাম প্রথমেই যেই জিনিসের শিক্ষা দিলো, তা হলো সকলেই আল্লাহর বান্দা। কারো ওপর কারো কোনো প্রকার শ্রেষ্ঠত্ব নেই শুধুমাত্র ঈমান ও তাকওয়া ছাড়া।[4] এই এক শিক্ষাই এতোদিনের দাসত্বের শক্ত খাঁচা থেকে মুক্তি দিলো। তাই তো নিগ্রো সম্মানিত সাহাবি বিলাল ইবনু রাবাহ (রা.)-ও ইসলামের তাওহিদের দাওয়াত পেয়ে হয়ে গেলেন মুক্ত, পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাঁকে আর আল্লাহর দাস হতে বাধা দিতে পারেনি। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে চিত করে শুইয়ে বুকে পাথর রেখে দিলেও কখনো “আহাদ!! আহাদ!!” বলতে ভুল হয়নি। কেননা ইসলাম তাঁকে সত্যিকারের মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছে। এখন আর তিনি আল্লাহ ছাড়া কারো গোলাম নন, আর কারো দাসত্বে তিনি আর বন্দি নন। এই বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভেজাল মুক্তমনারা কখনোই সত্যিকার মুক্তমনের স্বাদ আস্বাদন করতে সক্ষম নয়। তবে ইসলাম শুধুমাত্র এতোটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি। ইসলাম দাসদের মুক্ত করার ব্যাপারে কিছু যুগান্তকারী পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছে। সেগুলো নিম্নরুপ:

 

(১) ইতক বা স্বেচ্ছায় মুক্তিদান;

(২) গুনাহের কাফফারা;   

(৩) মুকাতাবাহ; এবং

(৪) সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

 

(১) ইতক বা স্বেচ্ছায় মুক্তিদান:

কোনো মনিব যদি চান, তাহলে সরাসরি এবং স্বেচ্ছায় দাস-দাসীকে মুক্তি দিতে পারেন। কুরআন ও হাদিসে এর অনেক ফযিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

আল্লাহ সৎকর্মের উল্লেখের সময় মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য ব্যয় করার কথা উল্লেখ করেছেন। (সুরা বাকারাহ ২:১৭৬)

এছাড়াও আল্লাহ বলেন,

“আপনি কি জানেন সেই ঘাঁটি কী? তা হলো দাসমুক্তি (সুরা বালাদ, ১২-১৩)

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

“যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে, তাকে তার প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে প্রতিটি অঙ্গকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।”[5]

 

এছাড়াও স্বেচ্ছায় দাসমুক্তি বা ইতকের অনেক ফযিলত রয়েছে। এই কারণেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবিরা এই ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হয়ে অনেক দাসকে মুক্তি দিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-ও অনেক দাসকে ইতক বা স্বেচ্ছায় মুক্তি দিয়েছিলেন। এছাড়া আবু বাকর (রা.) যিনি বেশ ধনী ছিলেন, তিনিও দাসমুক্তির জন্যে অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন। ইতিহাসে এর নজির দ্বিতীয়টি নেই যে, স্বেচ্ছায় কেউ এতো পরিমাণে দাস মুক্ত করেছে। এর একমাত্র কারণ আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর জান্নাত লাভের খালিস ইচ্ছা। আর কিছুই নয়।

 

(২) গুনাহের কাফফারাহ:

ইসলামে কিছু গুনাহের জন্য দাসমুক্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন:

(ক) কোনো মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করে ফেললে (সুরা নিসা, ৯২)

(খ) আল্লাহর নামে কৃত শপথ ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করে ফেললে (সুরা মায়িদাহ, ৮৯)

(গ) যিহার।[6]

(ঘ) রোযার সময় ভুলবশত স্ত্রী মিলন করে ফেললে।[7]

 

(৩) মুকাতাবাহ বা লিখিত চুক্তি:

মুকাতাবাহ বলতে এমন চুক্তিকে বোঝায়, যার দ্বারা দাস নিজেই নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধের শর্তে তার মুক্তির জন্য তার মনিবের সাথে এমন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যাতে মনিব ও দাস উভয়েই ঐকমত্যে পৌঁছায়।

 

শায়খ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহিম আত-তুওয়াইজিরি (রহ.) বলেন, “এটি হচ্ছে দাস-দাসীর পক্ষ থেকে মনিবকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আজাদ করার নাম”।[8]

আল্লাহ বলেন, “তোমাদের অধিকারভুক্ত যারা চুক্তিবদ্ধ হতে চায়, তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হও যদি তাতে কল্যা থাকে” (সুরা নূর, ৩২)

 

ইসলাম মুকাতাবাহকে সহজ করে দিয়েছে। যেহেতু:

১। যাকাতের একটি খাত ইসলাম নির্ধারণ করেছে দাসমুক্তি। (সুরা তাওবাহ, ৬০);

২। গোলামের জন্য এই ছাড় আছে যে সে মনিবকে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করবে;[9]

৩। মনিবের কর্তব্য হলো দাসকে অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে সহায়তা করা;

৪। দাস চুক্তি মোতাবেক অর্থ পরিশোধ করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে সে মুক্তি লাভ করবে;

 

(৪) ইসলামি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়:

ইসলামি সরকার যাকাতের খাত থেকে দাসমুক্তিতে ব্যবহার করতে পারে যেমনটা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। আর মুকাতাবাহ চুক্তি সম্পাদন করার পরে দাসের এই নিয়ে মোটেও চিন্তা করা লাগতো না যে, তার মনিব এই কারণে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে। কেননা ইসলামি সরকার তখন তার পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান। এমনকি সরকার চাইলে বাড়তি অর্থ দিয়ে দাস ক্রয় করে তাকে মুক্ত করে দিতে পারে।

 

ইসলাম দাস বানানোর প্রায় সকল রাস্তাকে (একটি ব্যতীত) বন্ধ করে দিলেও মুক্তির অভিনব পদ্ধতি দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ বাস্তবভিত্তিক। এমন সব উপায়ের সন্ধান দিয়েছে, যার ধারেকাছে কোনো তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্র ভাবতেও পারেনি। যেখানে কম্যুনিস্ট আর সোশ্যালিস্টরা সবকিছুকেই অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে চায়, সেখানে ইসলাম দাস ও স্বাধীন সকলকেই সত্যিকার মানসিক ও বাহ্যিক অর্থেও মুক্তির পথের দিশা দেয়। যেখানে আমেরিকার মতো রাষ্ট্র একের পর এক দাস বিদ্রোহে জর্জরিত হয়ে দাস মুক্তির পথ অন্বেষণ করে, তখন ইসলাম কালোত্তীর্ণ সমাধান ১৪০০ বছর আগেই দিয়ে গেছে।

 

 

ইসলামে দাসপ্রথার স্বরূপ :

দাসপ্রথা ও দাসমুক্তির ব্যাপারে ইসলামের যুগান্তকারী উপায়সমূহের ব্যাপারে অতি সংক্ষেপে আলোচনার পর ইনশাআল্লাহ আমরা এখন ইসলামে দাসপ্রথার স্বরুপ নিয়ে আলোচনা করবো।

 

দাসদের সাথে কেমন আচরণ করা হবে, কুরআন কারিমে তার আলোচনা আছে, কিন্তু কোথাও দাস বানানোর বিষয়ে উল্লেখ নেই। কুরআন কারিমের কোথাও স্বাধীন মানুষকে দাস বানানোর ব্যাপারে আদেশসূচক কোনো আয়াতও নেই। তবে যেহেতু সরাসরি কুরআনে দাস বানানোর ব্যাপারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো আয়াত নেই, তাই একে সরাসরি নিষেধ করারও কোনো উপায় নেই।

 

ইসলামপূর্ব সময়ে যে যে উপায়ে দাস বানানো যেতো, ইসলাম সেই সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে শুধুমাত্র একটি বাদে। তা হলো, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যুদ্ধবন্দিদের দাস বানানো। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দি ছাড়া ইসলামে দাস বানানোর আর কোনো উপায় বাকি নেই। তবে তা-ও বেশ শর্তসাপেক্ষে, যা একটু পরেই উল্লেখ করা হবে। তার আগে জেনে নেই যে ইসলামে মূলত জিহাদ কী ও কেন।

 

ইসলামে জিহাদ বলতে আল্লাহর রাস্তায় কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করাকে বোঝায়।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আত-তুওয়াইজিরি (রহ.) বলেন, “আল্লাহর কালেমা তথা তাওহিদকে উড্ডীন করার নিমিত্তে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করাকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বলে”।[10]

 

জিহাদ মূলত বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে।

১। ফিতনা দূরীভূত করা এবং দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা (সুরা-আনফাল, ৩৯) এখানে ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শিরক ও কুফর।

২। ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য।

৩। মজলুম মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সাহায্য করা। (সুরা নিসা, ৭৫)

৪। তাগুত অথবা জালিমের বিরুদ্ধে (সুরা নিসা, ৭৬)

৫। আগ্রাসন রোধের জন্য (সুরা বাকারাহ, ১৯০)

 

মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে বের করে আল্লাহর গোলামির দিকে নিয়ে যাওয়া, দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে আখিরাতের প্রশস্ততার দিকে নিয়ে যাওয়া, আর অন্যান্য দ্বীন বা মতবাদের অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম থেকে ইসলামের ন্যায়বিচারের দিকে নিয়ে যাওয়াই ইসলামের জিহাদের মূল উদ্দেশ্য, যেমনটি বিখ্যাত সাহাবি রিব‘ঈ ইবনু ‘আমর (রা.) পারস্য সেনাপতি রুস্তমকে বলেছিলেন।[11]

 

ইসলামি শরিয়াতের অনুমোদিত জিহাদে যুদ্ধবন্দিদের দাস বানানো যেতে পারে— এই একটি রাস্তা ইসলাম খোলা রেখেছে, তবে সেটিও শর্তসাপেক্ষে। জিহাদে যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থ ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মুসলিম রাষ্ট্রের খলিফা নিম্নের ৪টি সিদ্ধান্তের যে কোনো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন:

 

(১) অনুগ্রহ করে সবা বন্দিকে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেওয়া;[12] যেমনটি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন করেছিলেন। সেদিন সমস্ত ক্ষমতা, প্রতাপ, আধিপত্য মুসলিমদের হাতে থাকা সত্ত্বেও আরব ভূখণ্ডে ইসলাম পূর্ণতা পেলেও, মুসলিমদের পরিপূর্ণ বিজয়ের দিন, যেদিন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ২৩ বছরের ব্যথার দগদগে স্মৃতিগুলোর প্রতিশোধ না নিয়েই সমস্ত কাফিরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিলো। ইসলাম ছাড়া আর কোথায় পাবেন এমন আদর্শ?

(২) মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া;[13] যেমনটি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বদরের যুদ্ধের সময় করেছিলেন।

(৩) তাদেরকে হত্যা করা সম্পর্কিত সুরা আনফালের আয়াতটি[14] নাযিল হয়েছিলো বদর যুদ্ধের সময়ে, যেখানে বন্দিদের হত্যা না করে মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দিয়ে দেয়ার জন্য মুসলিমদের তিরস্কার করা হয়েছে। কারণ বদর যুদ্ধ মুসলিমদের প্রথম যুদ্ধ ও অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে মুসলিমগণ আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয় লাভ করেছিলেন। সেই সময়ে বদর যুদ্ধের অবাধ্য কাফিরদেরকে শুধুমাত্র মুক্তিপণ নিয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে আবার ষড়যন্ত্র করে ইসলামের দাওয়াতে বাধা সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়াটা কখনোই সুদক্ষ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে না। তাই আল্লাহ মুসলিমদের এহেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের তিরস্কার করে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যাতে প্রয়োজনের সময় দ্বীনের স্বার্থে মুসলিমরা কখনোই কঠোর হতে ভুলে না যায় এবং অবাধ্য কাফিরদের যাতে উপযুক্ত সাজা দেয়। তবে বার বার চুক্তি ভঙ্গ করে বিভিন্নভাবে মুসলিমদের কষ্ট দেওয়া অবাধ্য ইহুদি কাফিরদেরকে গাযওয়ায়ে বানু কুরাইযাতে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বন্দি করে হত্যা করেছিলেন।[15] তবে তা-ও শুধুমাত্র দ্বীনের স্বার্থে।

(৪) তাদেরকে দাস বানিয়ে রাখা: উপরের তিনটি উপায়ের একটিও যদি মুসলিমদের বৃহত্তর স্বার্থের উপযোগী ও গ্রহণযোগ্য না হয়ে থাকে, তবে মুসলিম খলিফা চাইলে যুদ্ধবন্দিদেরকে দাস বানিয়ে রাখতে পারেন। তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে তাদের হক আদায় করে দাস হিসেবে রাখা যেতে পারে।

 

তো উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, শরিয়তসম্মত জিহাদে খলিফা চাইলে বন্দিদের ব্যাপারে পরিস্থিতি মোতাবেক উপরিউক্ত ৪টি সিদ্ধান্তের যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পারেন। তবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ১ ও ২ নং এর যেকোনো একটি গ্রহণই আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। ইসলাম কখনোই শত্রুদের রক্তপিপাসু না যে, পেলো আর মেরে গেলো। তবে দ্বীনের দাওয়াতে বাধা দানকারীদের ব্যাপারে দয়ার কোনো সুযোগও নেই। আর ৩টির একটিও যদি উপযোগী না হয়, তবে খলিফা চাইলে যুদ্ধবন্দিদেরকে দাস বানিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে যা হবে:

 

(ক) যুদ্ধবন্দি যদি এমন হয় যে সে ফিরে গেলে পুনরায় মুসলিম উম্মাহর ও ইসলামের ক্ষতি করতে পারে বা ষড়যন্ত্র করতে পারে, তাহলে তার ক্ষতি থেকে মুসলিমরা বেঁচে যাবে। এতে দ্বীনের দাওয়াত প্রসারিত হবে।

(খ) তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ না করে দাস বানিয়ে রাখা অধিক যুক্তিসম্মত, কেননা কারাগারে রেখে দিলে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে আরো কিছু কর্মচারীর প্রয়োজন পড়তো। এতে করে নব্য ইসলামি রাষ্ট্রের উপর একটি অর্থনৈতিক চাপ পড়ে যেতো।

(গ) দাস বানিয়ে রাখলে কারাগারে নিক্ষেপ থেকে অধিক স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব। এতে করে মনিবের প্রতি ক্রোধ বা আক্রোশ কম হবে। তাছাড়া মনিব যদি দাসের সাথে বিনয়ী, কোমল ও দয়ার্দ্র আচরণ করে তাহলে সেই ক্রোধ বা আক্রোশের সম্ভাবনা অনেক কমে শূন্যের পর্যায়ে চলে আসবে।[16]

(ঘ) সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, মুসলিমদের সাথে বসবাস করতে করতে যদি কেউ ইসলামের সুমহান আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয় আর আল্লাহর ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে অনন্তকালের জাহান্নাম থেকে বেঁচে যায়, এর থেকে বড় সৌভাগ্যের ও মর্যাদার আর কিছুই হতে পারেনা।

(ঙ) আর যদি তা না-ও হয়, তবুও দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দাস-দাসী মনিবের সাথে মুকাতাবাত বা লিখিত চুক্তি করে নিতে পারে। মনিব এতে কল্যাণ দেখতে পেলে তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে নিলে, সে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে।

 

প্রশ্ন হতে পারে যে, ইসলাম তাহলে কেন অন্যান্য সামাজিক ব্যাধির মতো এই দাসপ্রথাকে চিরবিলুপ্ত করে দেয়নি?

 

পূর্বেই আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইসলামের আগমনই এমন সময় হয়েছে যখন দাসপ্রথার দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমানের মতো ছিল না। দাসপ্রথার ওপর তখন অর্থনীতির ভিত্তি অনেকাংশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর শিকড় বিদ্যমান ছিল, আর তা ছিলো অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত। তাই ইসলাম সেই সময়ে দাসপ্রথাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করেনি। এতে করে পুরো সমাজব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়তো, যা ইসলামি দাওয়াত প্রসারের পথে প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ দেখা দিতে পারতো। তাই ইসলাম দাসপ্রথাকে পরিপূর্ণভাবে বাতিল না করে দিয়ে এর সমাধানের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।

 

তাছাড়া ইসলামে জিহাদ যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া, তাই সুদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যুদ্ধবন্দীদের দাসপ্রথা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ঘোষণা করেনি যাতে কাফিরদের মোকাবেলায় যুদ্ধনীতি বা রাজনৈতিক নীতিতে ইসলামে কোনো স্থবিরতা না থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা জানেন আর আমরা খুবই কম জানি।

 

ইসলাম কেন যুদ্ধবন্দিনী দাসীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ককে বৈধ করেছে? :

ইসলামকে আঘাত করার ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য কম্যুনিস্ট, সোশ্যালিস্ট, নাস্তিক-মুক্তমনা, খ্রিষ্টান মিশনারি তথা ইসলামবিদ্বেষীদের অনেক মুখরোচক একটি অভিযোগ নিয়ে এখন আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আর তা হলো, ইসলাম কেন যুদ্ধবন্দিনী দাসীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা বৈধ করেছে।

 

ইসলামের এই ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনার পূর্বে এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানা দরকার। প্রাচীন গ্রীসে নারীদেরকে সম্পত্তি বলে বিবেচনা করা হতো, আর যুদ্ধবন্দী নারীদের ধর্ষণ করা ছিলো, “সামাজিকভাবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য যুদ্ধনীতি”।[17] রোম, গ্রীস ছাড়া অন্যান্য স্থানে নারীদের সাথে এর থেকে ভালো ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায় না। যেখানে যুদ্ধের পরে একটি অতি স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো ধর্ষণ, যেখানে দাসীরা ছিলো সমাজের সবচেয়ে নীচু পর্যায়ের, তাদের সাথে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা যেতো, যেখানে তারা ছিলো পুরুষের যৌনভোগের সস্তা বস্তু। তারা ছিলো অবজ্ঞা-অবহেলার পাত্র। যার সামান্য বর্ণনা দিতে গেলেও পৃথক গ্রন্থ লেখার প্রয়োজন।

 

পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, দীর্ঘদিনের সামাজিক ব্যাধি দাসপ্রথাকে ইসলাম পরিশীলিত ও নিয়ন্ত্রিত করেছে। একদিকে যেমন শরিয়তসম্মত জিহাদের মাধ্যমে কাউকে দাস বানানোর (Enslaving) এই একটি মাত্র পথই ইসলাম খোলা রেখেছে, অন্যদিকে এর বিপরীতে দাসমুক্তির বেশ কিছু বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী পথ উন্মোচন করেছে। আর তাই ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হওয়ার কারণে সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসা দাসীদের সাথে অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনতাকে বন্ধ করতে এবং পাশাপাশি দাসীদের জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য শুধুমাত্র বৈধভাবে মালিকানায় প্রাপ্ত দাসীর সাথে শারীরিক মেলামেশাকে বৈধ করেছে।

 

দাসীর সাথে শারীরিক মেলামেশা আল্লাহ বৈধ করেছেন, যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- সুরা নিসা’র আয়াত ২৪, সুরা মুমিনুনের আয়াত ৬, সুরা আহযাবের আয়াত ৫০, সুরা মা‘আরিজের আয়াত ৩০।

 

আচ্ছা, তাহলে একজন কিভাবে কোন দাসীর পরিপূর্ণ মালিকানা লাভ করতে পারে? তা দু’টি উপায়ে:

১। নিজে কাফিরদের বিপক্ষে জিহাদে অংশগ্রহণ করে নিজের গনিমনের অংশ থেকে যদি কোন দাসী লাভ করে থাকে;

২। যিনি শারঈভাবে দাসীর মালিক, তার কাছ থেকে দাসীকে ক্রয় করে থাকে;

আর এখানে কিছু ব্যাপার লক্ষণীয়। তা হলো,

ক) উপরোক্ত দুই উপায় ছাড়া আর কোনোভাবেই দাসীর মালিকানা পাওয়া যায় না। তাই এই দু’টি পন্থা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে কেউ যদি চাকরানির সঙ্গে বা চুক্তিবদ্ধ হয়ে উপপত্নীরূপে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তা হারাম ও ব্যভিচার বলে গণ্য হবে;[18]

খ) শারঈ জিহাদ যেহেতু শুধুমাত্র কাফিরদের বিপক্ষে লড়া যায়, তাই মুসলিমদের দুই পক্ষের মধ্যকার রাজনীতি, ভাষা, অত্যাচার, নিপীড়ন, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির কারণে সংঘটিত যুদ্ধকে জিহাদের নাম দিয়ে সেখানে মুসলিম নারীদেরকে দাসী বানানো হারাম হবে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন অবশ্যই ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মা-বোনদের সাথে যা করেছে তা স্পষ্ট ধর্ষণ ও যিনা। একে গনিমত বলার কোনোই ভিত্তি নেই। অনেক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী মুখোশের অন্তরালের ইসলামবিদ্বেষীরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংলাদেশের মা-বোনের সাথে আচরণকে পুঁজি করে ইসলামকে কটাক্ষ করে থাকে, যা ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতাকে প্রমাণ করে;

গ) দাসীর সাথে এমন সম্পর্ক করা ইসলামই প্রথম শুরু করেনি বরং ইসলাম পূর্বেকার এই সম্পর্কিত যাবতীয় ঘৃণ্যতা ও বল্গাহীন পাশবিকতাকে বন্ধ করে দিয়ে একে নিয়ন্ত্রিত ও মানবিক করেছে;

ঘ) দাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা ইসলামের কোনো অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় বরং তা বৈধ;

 

দাসী মিলনের ব্যাপারে দৃষ্টিকো:

 

(১) নিজের গনিমতের অংশ হওয়া:

ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, যুদ্ধবন্দিদের ছেড়ে দেয়া হবে না, এমনকি মুক্তিপণের বিনিময়েও নয়, তাহলে মুজাহিদিন (যারা জিহাদে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন) যদি গনিমতের মাল হিসেবে দাসী তার নির্দিষ্ট অংশে (হিসসা) পেয়ে থাকেন, তাহলেই শুধু দাসী হালাল হবে; অন্যথায় নয়। আর গনিমত বণ্টন হওয়ার পূর্বে কোনোমতেই গনিমত থেকে কিছু নেয়া যাবে না। এটাই সাধারণ নিয়ম।[19] আর গনিমতের মাল বণ্টনের পূর্বে কিছু নেয়ার ব্যাপারে হাদিসে কঠিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদিসের ভাষ্যমতে, যে এমনটি করবে সে রাসুলুল্লাহর (ﷺ) উম্মাত বলে পরিগণিত হবে না বলে কড়া তিরস্কার আছে।[20] আর তাই যেহেতু গনিমত বণ্টনের পূর্বে কোনোমতেই গনিমত থেকে কিছু নেয়া যাবে না, তাই দাসীর সাথে মিলিত হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। আর কেউ এমনটি করলে তা যিনা বলে বিবেচিত হবে এবং সে অবশ্যই রজমের যোগ্য হয়ে যাবে।

 

যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে যে, খালিদ (রা.) যিরার ইবনুল আহওয়াজকে পাঠালেন। তাঁরা বানি আসাদকে আক্রমণ করেন। সেখানে এক সুন্দরী নারীকে তাঁরা বন্দি করলে তিনি বণ্টন হওয়ার পূর্বেই তাকে তার সঙ্গীদের নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে তার সাথে মিলিত হলেন। পরবর্তীতে তিনি অনুতপ্ত বোধ করে খালিদ (রা.) এর নিকট যেয়ে বললে খালিদ (রা.) উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) নিকট লিখে জানান। উমার বলেন, যিরার রজমের যোগ্য (যেহেতু তিনি গনিমতের মাল বণ্টনের পূর্বেই নিজের ইচ্ছামতো নারীকে বেছে নিয়ে মিলিত হয়েছেন), পরবর্তীতে রজম করার পূর্বেই যিরার ইবনুল আহওয়াজ মারা যান।[21]

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, গনিমত বণ্টনের পূর্বে কোনোমতেই দাসীদের স্পর্শও করা যাবে না। এই হাদিসটি অভিযোগকারীদের মুখে চপেটাঘাত। কারণ তারা অনেকে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় মুসলিমরা নাকি যুদ্ধক্ষেত্রেই নারীদের ধর্ষণ করে! নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।

 

(২) গর্ভবতী যুদ্ধবন্দিনীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে না:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কোনো গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে সন্তান প্রসবের পূর্বে ও কোনো নারীর সাথে হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার পূর্বে মিলিত হবে না।” এই বিষয়ে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত আছে।[22]

 

(৩) বন্দিনী যদি গর্ভবতী না হয় তবে এক ইদ্দত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কোনো গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে সন্তান প্রসবের পূর্বে এবং অন্য নারীর (বন্দিনী) সাথে এক হায়েজ হতে পবিত্র হওয়ার পূর্বে মিলিত হবে না”।[23]

এই বিষয়ে অন্যান্য হাদিসও বর্ণিত হয়েছে।[24]

 

(৪) দুই ক্রীতদাসী বোনের সাথে একত্রে মিলিত হওয়া যাবে না:

সাহাবি উছমান ইবনু আফফান (রা.), যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.), অন্যান্য সাহাবি এবং ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে, দুই ক্রীতদাসী বোনের সাথে একত্রে (বোঝানো হচ্ছে, এক বোনের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে অন্য বোনের সাথে) সম্পর্ক রাখা যাবে না।[25]

উমার (রা.) এর মতে, মা এবং কন্যার সাথেও একই সময়ে মিলিত হওয়া যাবে না।[26]

 

(৫) দাসী শুধুমাত্রই তার মালিকের জন্য:

ইসলামে দাসী নারীকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলে বিবেচনা করা হয় না। যেখানে প্রাচীন গ্রীসে ও রোমে দাসী নারীকে মনে করা হতো জনগণের সম্পত্তি, সেখানে ইসলাম শুধুমাত্র মালিকের জন্যই দাসীকে বৈধ করেছে, আর কারো জন্য নয়। নিজের বাবার[27] বা এমনকি নিজের স্ত্রীর[28] দাসীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনও জায়েয নেই। যদি কেউ নিজ স্ত্রীর দাসীর সাথে সম্পর্ক করে আর তাতে স্ত্রীর সম্মতি থাকে, তবে পুরুষকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। আর যদি স্ত্রীর সম্মতি না থাকে, তবে তাকে যিনার দায়ে রজম করা হবে।

 

(৬) কৃতদাসীর বিয়ে দিয়ে দিলে সে মালিকের জন্য হারাম হয়ে যাবে:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি পুরুষ দাসীকে তার নারী দাসীর সাথে বিয়ে দেয়, তবে তার গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত হবে না।”[29]

 

(৭) দাসীর বৈবাহিক সম্পর্ক:

কোনো মহিলাকে যদি স্বামীর পূর্বেই দারুল ইসলামে বন্দি করে নিয়ে আসা হয় এবং স্বামী যদি দারুল হারবে থেকে যায়, তাহলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটবে। আর যদি স্বামী এবং স্ত্রীকে একত্রে বন্দি করা হয় (তবে স্বামীর পূর্বে স্ত্রীকে দারুল ইসলামে আনা যাবে না), তবে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকবে। যেমনটি ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.) বর্ণনা করেছেন তার আস-সিয়ারুস সাগির কিতাবে।[30] ইমাম সারাখসিও এমনটিই বলেন।[31]

 

এখানে খুব মুখরোচক একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, ইসলাম কি বন্দিনীদের ধর্ষণ করার অনুমতি দেয়? কারণ একজন মেয়ে কীভাবে এমন কারো সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে রাজি হতে পারে, যে তার পরিবারের লোকদেরকে হত্যা করেছে? সুতরাং মুসলিমরা নিশ্চয়ই তাদের ধর্ষণ করে (নাউযুবিল্লাহ)।

 

প্রথমত, তাঁরা কোনো প্রমাণই দেখাতে পারবেন না যে, মুসলিম সৈন্যরা বন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। কোনো প্রমাণই নয়। আর একজন মেয়ে কেন তার পরিবার-হন্তাদের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে যাবেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, এই অভিযোগকারীদের অনেকেই ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত নয়।

 

জন ম্যাকক্লিনটক (মৃ-১৮৭০) লেখেন,

“Women who followed their father and husbands to the war put on their finest dresses and ornaments previous to an engagement, in the hope of finding favor in the eyes of their captors in case of a defeat.[32]

“যে সকল নারীরা তাদের বাবা অথবা স্বামীদের সাথে যুদ্ধে যেত তারা সবচেয়ে ভালো মানের পোশাক ও অলঙ্কার পরিধান করত যাতে বন্দী অবস্থায় বিজয়ীদের দয়া পাওয়া যায়।”

 

ম্যাথু বি শোয়ার্টজ লেখেন,

“The Book of Deuteronomy prescribes its own rules for the treatment of women captured in war [Deut 21:10-14 ]. Women have always followed armies to do the soldiers' laundry, to nurse the sick and wounded, and to serve as prostitutes.

They would often dress in such a way as to attract the soldiers who won the battle. The Bible recognizes the realities of the battle situation in its rules on how to treat female captives, though commentators disagree on some of the details.

The biblical Israelite went to battle as a messenger of God. Yet he could also, of course, be caught up in the raging tide of blood and violence. The Western mind associates prowess, whether military or athletic, with sexual success.

The pretty girls crowd around the hero who scores the winning touchdown, not around the players of the losing team. And it is certainly true in war: the winning hero "attracts" the women.[33]

“বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণে (Deuteronomy) (২১:১০-১৪) যেইসব নারীরা যুদ্ধে বন্দি হয়েছে তাদের বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেইসব নারীরা যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের সঙ্গে যেতো তারা সাধারণত সৈন্যদের কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করতো, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত সৈন্যদের সেবা-শুশ্রুষা করত আর তাদের যৌন চাহিদা পূরণের জন্যে পতিতা হিসেবে কাজ করতো। তারা এমন কাপড় পরিধান করতো, যা বিজয়ী সৈন্যদের আকর্ষণ  করবে...

যুদ্ধক্ষেত্রে সুন্দরী নারীরা পরাজিত সৈন্যদের নিকট নয় বরং বিজয়ী বীরদের নিকটই ভিড় জমাতো। আর এটা যুদ্ধের ক্ষেত্রে চিরন্তন সত্য যে, বিজয়ী সৈন্যরাই নারীদের মনজয় করে থাকে।”

 

স্যামুয়েল বার্ডার (মৃ. ১৮৩৬) লেখেন,

“It was customary among the ancients for the women, who accompanied their fathers or husbands to battle, to put on their finest dresses and ornaments previous to an engagement, in order to attract the notice of the conqueror, if taken prisoners.”[34]

“এটি প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিলো যে, যেসকল নারীরা তাদের বাবা অথবা স্বামীর সাথে রণক্ষেত্রে যেতো, তাদেরকে সবচেয়ে উন্নতমানের কাপড় ও অলঙ্কার পরিধান করানো হতো, যাতে বন্দি হলে বিজয়ী বন্দিকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।”

 

তাই বলা যায় যে, পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করা মোটেই আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। এটা ইতিহাস দ্বারাই প্রমাণিত।

 

দ্বিতীয়ত, আমরা পূর্বের আলোচনা থেকে বুঝতে পারছি যে, বন্দিনীদেরকে ইদ্দত পালনের বা হায়েজ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সময় দেয়া আবশ্যক। এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিধান লক্ষ করা যায়, এই সময় দেয়াটা বন্দিনীদেরকে তাদের নতুন ইসলামি পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য সহায়তা করে থাকে যেমনটি মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেছেন।[35] এতে করে তারা নতুন ইসলামি পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে পারে, ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে। ইসলাম সম্পর্কে জানার পরে তার ভুল ভাঙতে পারে ও তাদের পরিবার হন্তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনেও রাজি হতে পারে।

 

তৃতীয়ত, বন্দিনীরা যদি তাদের সাথে সম্পর্কে রাজি না-ই থাকতো, তবে মালিকরা তাদের বিক্রি করে দিতো, যাতে অন্য মালিকের কাছে দাসী চলে যেতে পারে। এতে করে হয়তো দাসীর অন্য মালিকের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটে। এখানে ধর্ষণের ব্যাপার-স্যাপার কোথা থেকে আসলো?

 

চতুর্থত, বন্দিনীরা দেখবে যে, তারা এমন কিছু মানুষের সাক্ষাত পেয়েছে যারা একেবারে আলাদা আর অনন্য, অসাধারণ। যারা বিশ্বমানবতাকে আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহ্বান করে। যারা সকলকে আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে আহ্বান করে। যাদের নিকট তাদের নবির (ﷺ) কথা সর্বোচ্চে ও সর্বোর্ধে। যাদের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই জীবনের এক ও একমাত্র লক্ষ্য। যারা সেই মহান অধিপতির জন্য জীবন দেয়াকে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। যাদের কাছে এই দুনিয়ার ধনসম্পদ, নারী, বাড়ি, সুদৃশ্য বাহন তুচ্ছ। মানুষ যখন ঘুমে বিভোর, দিনের বেলায় রোযা রাখা ওই জিহাদের ময়দানের বীর সেনানী তখন আরামের শয্যা ত্যাগ করে মহান সেই সত্তার কাছে সিজদায় অবনত হয়, নিজের গুনাহর জন্য ক্ষমা চায়। তারা দেখবে তাদের নেতা খেজুর পাতার ওপরেই আরামসে ঘুম দেয়। তারা প্রত্যক্ষ করবে তারা দাসকে রুটি দিয়ে নিজেরা সন্তুষ্টির সাথে খেজুর খেয়ে দিনাতিপাত করে। নিজেরা তা-ই খায়, যা দাস-দাসীরা খায়। তারা তা-ই পরিধান করে, যা দাস-দাসীরা পরিধান করে। যাদের রাষ্ট্রনায়ক নিজে উটের রশি ধরে দাসকে উটের পিঠে বসায়। তারা যখন ইসলামের সৌন্দর্য ও স্বরুপ, ন্যায়বিচার, ক্ষমাপরায়ণতা দেখতে পাবে, তখন তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে রাজি হওয়া অস্বাভাবিক নয়, বরং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

 

দাসীর সাথে সম্পর্কের লুকায়িত হিকমাহ ও যৌক্তিকতা :

তার আগে আমরা একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকাই। পূর্বে, দাসীর বিয়ের পরেও দাসী মালিকের চাহিদা মেটাতে বাধ্য ছিলো। তাদের সম্পর্কের কারণে জন্ম নেয়া বাচ্চার পিতৃত্বও তারা স্বীকার করতো না।[36]

 

দাসীর সন্তানও দাস হিসেবেই বিবেচিত হতো। আর পিতৃত্ব স্বীকার করতো না। এবং তাদের এই অমানবিক কাজকে প্রশাসনও সমর্থন করতো[37]

 

ইহুদি সমাজে দাসীদেরকে পরিবারের ভেতরেই অথবা বাহিরে পতিতা হিসেবে ব্যবহার করা সাধারণ ব্যাপার বলে গণ্য করা হতো।[38]

 

রোমান সমাজে বড় বড় ব্যবসায়ীদের দাসীদেরকে জোর করে পতিতা বানিয়ে রাখা হতো অন্য পুরুষের খায়েশ পূরণের জন্যে।[39]

 

আসুন ইসলামের দিকে ফিরে আসি।

পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে ইসলামের দাসপ্রথার ভিত্তি কী এবং এখন পর্যন্ত দাসপ্রথাকে কেন ইসলাম বৈধ করেছে, এই বৈধতার সীমাই বা কতটুকু। এই পর্বে আরো আলোচনা করা হয়েছে ইসলামে দাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও সীমা। এর যৌক্তিকতা ও অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও হিকমাহগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

 

(১) পূর্বে দাসীদেরকে যে কেউই ব্যবহার করতে পারতো। এমনকি একই পরিবারের অনেক সদস্য তাদেরকে ভোগ করতে পারতো। তবে ইসলাম শুধুমাত্র মালিকের জন্যই দাসী-সম্ভোগ বৈধ করেছে। এতে প্রাচীনকালে যেমন যুদ্ধ শেষে নারীদেরকে ধর্ষণ করা হতো বা তাদেরকে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো, ইসলাম সেই সুযোগকে মিটিয়ে দিয়েছে। ইসলামে বৈধভাবে মালিকানাপ্রাপ্ত মালিকের সাথে দাসীর শারীরিক সম্পর্কের সুযোগ রেখে নারীকে বেইজ্জতি থেকে বাঁচিয়েছে, তাদেরকে সম্মানিত করেছে, তাদেরকে নতুন একটি পরিবার দিয়েছে, তাদেরকে অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিয়েছে;

(২) মালিক ও দাসীর সম্পর্ক অবশ্যই ঘোষণা করতে হবে। যাতে লোকমনে তাদের দুইজনের ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহ ও সংশয় না থাকে। এতে করে নারীটি পায় যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা;

(৩) এর ফলে দাসীটির শারীরিক চাহিদা পূরণের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা হয়। এতে একদিকে দাসীটির স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ হয়, অন্যদিকে দাসীটি চাহিদা পূরণ না করতে পেরে অবৈধ কোনো পন্থা বেছে নেয়ার শঙ্কাও দূরীভূত হয়। এতে রাষ্ট্রে চারিত্রিক পবিত্রতা ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে;

(৪) মালিকের জন্য দাসীকে বিয়ে করা জায়েয।[40] যেমন হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি দাসীকে উত্তম রুপে লালন-পালন, প্রতিপালন করে, তার প্রতি ইহসান করে, তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে, তার জন্যে আছে দ্বিগুন সওয়াব;”[41]

(৫) দাসীকে কোনোমতেই অন্য পুরুষের সাথে যৌনাচার করতে বাধ্য করা যাবে না, যেমনটা রোমান সমাজে প্রচলন ছিলো;

(৬) দাসীকে অন্ন-বস্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে হবে, সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে;

(৭) দাসী যদি উম্মুল ওয়ালাদ (ওই মালিকের সন্তানের জননী) হয়, তবে ওই দাসী বিক্রি হারাম হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, “তোমরা উম্মুল ওয়ালাদ বিক্রি করো না।”[42] আর ওই দাসী মালিকের মৃত্যুর পরে মুক্ত হয়ে যাবে।[43] এতে যেমন দাসীর মুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে, তেমনি সন্তানের পিতৃপরিচয়ের নিশ্চয়তা আছে। আর সন্তানও মুক্ত বলে বিবেচিত হবে;

(৮) দাসীর জন্য এ সুযোগও রয়েছে সে মালিকের কাছে দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে এবং দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে। দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে;

(৯) সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এতে দাসী খুব কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে, বুঝতে, উপলব্ধি করতে পারে। এতে হয়তো সে ইসলাম গ্রহণ করে নিতে পারে, যা তার জন্যে চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর চিরশান্তির জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে পারে;

 

কেন এতো বিরোধিতা? :

যারা ইসলামের দাসপ্রথা নিয়ে বিরোধিতা করেন, তাদের কাছে দাসপ্রথা অর্থই রোম আর গ্রীসের বর্বর আর অমানবিক ও পাশবিক এক সিস্টেম। যেখানে দাসদের নেই কোন মর্যাদা, কোন অধিকার, কোন সুখ বা অনুভূতি। তবে তারা কি জানেন যে ইসলাম এসব অভিযোগ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে?

 

তাঁরা কি জানে যে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে যে কথা বলছিলেন— (الصلاة الصلاة  وما ملكات أيمانكم) “সালাত!! সালাত!! তোমাদের দাস-দাসীগণ!!”[44] ইসলামে একজন ক্রীতদাসও আমির বা শাসক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।[45] এক্ষেত্রে যোগ্যতা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিগত অবস্থা বিবেচিত হতো না। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) যখন কুফার বিচারপতি হিসেবে যান, তখন তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত দাস আম্মার ইবনু ইয়াসির সেখানকার ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।[46] দাস যদি যথাযোগ্য হন, তবে তিনি ইমামতিও করতে পারেন।[47] আলে আবি মায়সারা ইবনু খুছাইমের আযাদকৃত দাস ‘আতা ইবনু আবি রাবাহ (রহ.) মক্কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাবেয়ি (যাঁরা সাহাবিগণকে রা. ঈমানের সাথে দেখেছেন, তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা করেছেন এবং ঈমানের সাথে ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের তাবেয়ি বলে) ছিলেন।[48] এছাড়াও আরো অনেক বিদগ্ধ তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িনই মুক্তিপ্রাপ্ত দাস ছিলেন।

 

এছাড়া ইসলামি শাসনে বিখ্যাত মামলুক সুলতানরা ছিলেন দাস। ইসলামের বিভিন্ন কীর্তিতে দাসদের অনেক বড় ভূমিকা আছে, যা অনস্বীকার্য। এর মূল কারণ হলো ইসলামি মূল্যবোধ, যা ঈমান ও তাকওয়ার মানদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো স্ট্যান্ডার্ডে মানুষকে দেখে না। কিন্তু কম্যুনিস্ট, সোশ্যালিস্ট, নাস্তিক-মুক্তমনা, প্রাচ্যবিদ আর খ্রিষ্টান মিশনারিরা দাসপ্রথাকে দেখে সেই পশ্চিমাদের তৈরি করা চশমা দিয়ে, যার ভিত্তি হলো সেই অমানবিক গ্রীক-রোমান দাসব্যবস্থা, যার সাথে ইসলামের দাসব্যবস্থার মৌলিকতার দিক থেকে বিন্দু-বিসর্গও সাদৃশ্য নেই। তারা এখনো সেই কুসংস্কারপূর্ণ স্ট্যান্ডার্ডেই ইসলামকে মেপে থাকে, যাদের অধিকাংশই বিদ্বেষবশত কোনো প্রকার জানা-শোনা ছাড়াই ইসলাম সম্পর্কে ঢিল ছুঁড়ে থাকে। আর এদের কেউ কেউ অতি সুপরিকল্পিতভাবেই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। যারা ইসলামের পোশাক পরে অন্তরে চরম বিদ্বেষ রেখে অতি সন্তর্পণে বিষদাঁত ঢুকিয়ে দেয়, এদের মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে প্রাচ্যবিদ (Orientalists), যারা রাসুলুল্লাহর (ﷺ) জীবনী লেখার ছলে তার পবিত্রতম জীবনে কালিমা লেপনের চেষ্টায় বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। আর গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে হাল যুগের সর্বসাধারণের নিকটে সেসব রচনারই প্রচার-প্রসার ঘটানো হয়েছে। আর এর ফলে সন্তর্পণেই প্রাচ্যবিদদের স্ট্যান্ডার্ডে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র সীরাতকে মাপতে গিয়ে গোটা ইসলামকেই সন্দেহের চোখে দেখতে আরম্ভ করে। যার ফলাফল আজ আমাদের সামনে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সন্তান নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষীরূপে বিদ্যমান।

যদিও এদের কাছে বর্তমান যুগের নানা ছলে বলে কৌশলের দাসব্যবস্থা চোখে পড়ে না বা তারা নিজেরাই এর পৃষ্ঠপোষক। একটু দেখে নেওয়া যাক—

 

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে, সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ দাসপ্রথার শিকার হয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান Walk Free Foundation এর The Global Slavery Index ২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী (যা ১৬৭টি দেশের ওপর চালানো হয়েছে), তাতে দেখা যায় ৪৫.৮ মিলিয়ন লোক বিভিন্নভাবে দাসত্বের শিকার হয়ে আছে।[49]

 

মানবপাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে পুরুষ, নারী, শিশুদেরকে নিয়ে আনা হয়। যার জন্য মানবপাচার বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সুসংগঠিত ও লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। ILO (International Labor Organization) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মানবপাচার থেকে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থ উপার্জিত হয়।[50]

 

পাচারের পরবর্তী সময়ে তাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করা হয়। যেমন, জোরপূর্বক কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়, কখনো নারীদেরকে পতিতালয়ে কাজ করার জন্য বলপ্রয়োগ করা হয় বা যৌনদাসী/রক্ষিতারূপে রেখে দেওয়া হয়, কখনো বা অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়। ২০১২ সালের International Labor Organization এর রিপোর্ট মতে, প্রায় ২০.৯ মিলিয়ন লোককে জোরপূর্বক কাজে (ফোর্সড লেবার) যুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪.৫ মিলিয়নকে (২২%) যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানো হয়।[51] ১৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৯৯ বিলিয়ন ডলারই সেক্সুয়াল এক্সপ্লোয়েটেশন খাত থেকে আসে!

অপরদিকে UNODC (United Nations Office on Drugs and Crime) এর ২০১১ এর রিপোর্ট মতে, পাচারকৃতদের মধ্যে প্রায় ৪৯%-ই হলো নারী।[52]  মোট পাচারককৃত নারীদের ৫৩%-ই যৌন হয়রানীর জন্য হয়ে থাকে।[53] ২০১২ এর রিপোর্ট এর মতে, ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।[54]

এই ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবস্থা দেখা নেয়া যাক—

 

যুক্তরাষ্ট্র

The National Human Trafficking Resource Center এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকার ২০১৬ সালের মানবপাচারের কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো:

সর্বমোট রিপোর্টেড কেসের সংখ্যা ৭৫৭২টি। যার মধ্যে ৬৩৪০ জনই নারী আর বাকি মাত্র ৯৭৮ জন পুরুষ। যার অধিকাংশই যৌন দাসত্বের জন্যই বেশিরভাগ হয়ে থাকে, যার সংখ্যা প্রায় ৫৫৫১টি।[55]

 

ব্রিটেন

National Referral Mechanism রিপোর্ট মতে, ২০১৫ সালে ব্রিটেনে ২৪৫% মানবপাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে প্রায় ৩২৬৬ জন পাচারের শিকার হয়েছে যেখানে ২০১৪ ও ২০১১ সালে এর পরিমাণ ছিলো যথাক্রমে ২৩৪০ ও ৯৪৮ জন।[56]

 

ভারত

বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের পাশের দেশ ভারতে লক্ষ লক্ষ নারী ও শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। ভারতে নিজেদের রাজ্য থেকে তো বটেই, তাছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, বার্মা, মধ্য এশিয়া এবং অন্যান্য স্থান থেকে ভারতে নারী ও শিশুদেরকে পাচার করা হয়ে থাকে।[57]

 

The Ministry of Women and Child Development এর রিপোর্ট মতে, ২০১৬ সালে ১৯২২৩ জন নারী ও শিশু পাচার করা হয়েছে (এটা শুধুমাত্র যতোটুকু রিপোর্ট করা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই পরিসংখ্যানকৃত। কারণ অধিকাংশই ভয়ে রিপোর্ট করে না) যেখানে ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিলো ১৫৪৪৮ জন, এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই বেশি রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত মানব পাচারের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।[58]

ভারতের ছত্রিশগড়ে প্রতি বছর প্রায় ১,৩৫,০০০ শিশু নিখোঁজ হয়ে থাকে।[59]

National Crime Records Bureau (NCRB) এর ২০১৩ এর রিপোর্ট মতে, ভারতে গত ৫ বছরে মানবপাচার সংক্রান্ত কেস প্রায় ৩৮.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এখানে সর্বোচ্চ পাচার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। [60]

 

Walk Free Foundation এর The Global Slavery Index ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত শীর্ষে ছিলো।[61]

 

ইসলামের দাসপ্রথার ব্যাপারে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা কি এইসব নব্য দাসব্যবস্থা দেখেন? এই অন্ধকার জগত সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন?? নাকি দেখেও না দেখার আর জেনেও না জানার ভান করেন? তথাকথিত মুক্তমনাদের তো এইগুলো নিয়ে তেমন সোচ্চার হতে দেখা যায় না। নাকি তাদের সকল আক্রমণের মূলে একমাত্র ইসলাম? তাও আবার নোংরা মিথ্যাচার দিয়ে!

 

যেই অন্ধকার জগতে হাজার হাজার নারী আটকা পড়েছে, যাদেরকে দিয়ে জোর করে পতিতাবৃত্তিত করানো হচ্ছে, যৌনদাসী হিসেবে রেখে দিয়ে হাজার পুরুষ সানন্দে ভোগ করছে, তাছাড়া গ্লোবালি সকলের মোবাইলে মোবাইলে তাকে ভোগ করার জন্য আছে পর্নোগ্রাফি। এগুলো কি সেই পুরোনো দাসব্যবস্থার নয়া পোশাক নয়? এসব ব্যাপারে তো কথিত হিউম্যানিটেরিয়ানদের আনাগোনা নজরে পড়ে না! কেন?

 

প্রাচ্যবিদ, নাস্তিক-মুরতাদ, খ্রিষ্টান মিশনারিদের কলমে রাসুলুল্লাহর (ﷺ) যে চিত্র ভেসে ওঠে, তা নিজের হাতে লেখা আরবীয় উপকথাকে ওহির নামে চালিয়ে দেওয়া এক যুদ্ধপ্রিয়, রক্তপিপাসু, ক্ষমতালিপ্সু, যৌনতাপিপাসু, নৃশংস আর বর্বর এক লোক (তিনি (ﷺ) এসব অভিযোগ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে)। হায় আফসোস তাদের জন্য যারা মিথ্যাচার করে এমন কারো ব্যাপারে, যিনি সেসব হতভাগাদের দৃষ্টিতে নিজের বানানো কিতাবকে ওহি বলে চালিয়ে দিয়েছেন, সেই কিতাবের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কষ্টভোগ করে গেছেন কিন্তু সেই কিতাব ছাড়েননি, যিনি সারাটি জীবন কাটিয়ে দিলেন এমন ঘরে দাঁড়িয়েই যার ছাদের নাগাল পাওয়া যায়, যার পেট হয়তো কখনোই খাবার দ্বারা পূর্ণ হয়নি, যিনি মৃত্যুর সময় কিছুই রেখে যাননি! হায়! পৃথিবী হয়তো এমন ক্ষমতালিপ্সু (!), রক্তপিপাসু (!) আর বর্বর (!) লোক দেখেনি কখনোই—যারা নিজেদের ইগো আর প্রবৃত্তিকে নিজেদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে এমনটি অস্বাভাবিক কি? না, মোটেই না!

 

তথ্যসূত্রঃ

[1] রেদওয়ানুর রহমান, দাস বিদ্রোহ ও স্পার্টাকাস (সমতট, ২০১৫),পৃ-১৪

[2] ঐ, পৃ-১৬

[3] http://www.ancient.eu/gladiator/

[4] সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৩

[5] সহিহ বুখারী, ইফা, কিতাবুল ইতক, হা-২৩৫১

[6] যিহার হলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বলা যে তুমি আমার মায়ের পিঠের মতো হারাম এই কথা বললে সেই স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে যেমন তার মা তার জন্য হারাম।

[7] সহীহ বুখারি, ইফা, ৩/২৫৮, হা-১৮১৩

[8] কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামি ফিকহ, ২/৪৪৬

[9] সহিহ বুখারি, কিতাবুল ইতক, হা-২৩৯৩

[10] কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকহ, ২/৭৮৫

[11] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইফা, ৭/৭৭

[12] সূরা মুহাম্মাদ, ৪

[13] সূরা মুহাম্মাদ, ৪

[14] সূরা আনফাল, ৬৭

[15] আর রাহিকুল মাখতুম, গাযওয়ায়ে বানু কুরাইযাহ দ্রষ্টব্য

[16] আশরাফুল জাওয়াব, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), পৃ-৩১-৩৪

[17] https://en.wikipedia.org/wiki/Wartime_sexual_violence

[18] https://islamqa.info/en/26067

[19] তিরমিযি, হা নং- ১৫৬৩ এবং ১৬০০, শায়খ আলবানির মতে সনদ সহিহ

[20] তিরমিযি হা নং-১৬০১, সনদ সহিহ

[21] আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি, (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ), পৃ-১৭৭, হা নং- ১৮২২২, হাদিসটি হারুন ইবনুল আসিম নামক রাবির কারণে দুর্বল।

[22] সহিহ মুসলিম, ইসে, ৫/৮৫, হা-৩৪২৬,  সুনানু আবি দাউদ, ইফা, ৩/১৬১, হা-২১৫৩-৫৫,  তিরমিযি, হা-১৫৬৪

[23] সুনানু আবি দাউদ, ইফা, ৩/১৬১, হা-২১৫৪

[24] ঐ, হা-২১৫৫-৫৬, তিরমিযি, ইবনু হিব্বান।

[25] মুয়াত্তা মালিক, ইফা, ২/১৪৪-৪৫, রেওয়ায়েত-৩৪-৩৫

[26] ঐ, রেওয়ায়েত-৩৩

[27] ঐ, ১/১৪৬-৪৭, রেওয়ায়েত-৩৬-৩৮

[28] সুনান আবু দাউদ, হা-৪৪৫৮-৫৯

[29] ঐ,হা- ৪১১৩

[30] কিতাবুস সিয়ারুস সাগীর (ইংরেজী অনুবাদ), অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৪৫, পৃ-৫১

[31] ঐ, ফুটনোট-৪৬, পৃ-৯৩

[32] John McClintock, James Strong, "Cyclopædia of Biblical, Theological, and Ecclesiastical Literature" [Harper & Brothers, 1894, p. 782

[33] Matthew B. Schwartz, Kalman J. Kaplan, "The Fruit of Her Hands: The Psychology of Biblical Women" Wm. B. Eerdmans Publishing, 2007 , pp. 146-147

[34] Oriental Customs Or, an Illustration of the Sacred Scripture, Williams and Smith, London, 1807 vol.2 p.79, no. 753

[35] মিরকাতুল মাফাতীহ (দারুল ফিকর), ৫/২১৮৯

[36]https://www.bowdoin.edu/~prael/projects/gsonnen/page4.html

[37]http://www.womenintheancientworld.com/women%20and%20slavery%20in%20ancient%20rome.htm  

[38] The Cambridge World History of Slavery, vol.1, (Cambridge University press) The ancient Meddeterrean World, pg-445

[39] Roman Social-Sexual Interactions, A critical Examination of the Limitations of Roman Sexuality, (University of Colorado, Undergraduate Honors Theses), pg-72

[40] সূরা নিসা, ২৫

[41] সহিহ বুখারি, ইফা, হা-২৩৭৬, ২৩৭৯

[42] সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ, ৫/৫৪০, হা-২৪১৭

[43] আল-কুরআনুল কারীম বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ড. আবু বকর জাকারিয়া, ১/৪০৬

[44] বুখারি

[45] সহিহ মুসলিম, ইসে(বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার) ২/৪৪১, হা-১৩৫২

[46] দাসপ্রথা ও ইসলাম, মা, আব্দুর রহীম, পৃ-৪৬

[47] http://seekershub.org/ans-blog/2009/06/17/can-an-illegitimate-son-lead-salat/

[48] তাবিঈদের জীবনকথা, ড মুহাম্মদ আবদুল মা’বুদ, পৃ-১৩৯

[49] https://www.globalslaveryindex.org/findings/

[50] http://www.humanrightsfirst.org/resource/human-trafficking-numbers

[51] International Labour Organization, ILO global estimate of forced labour: results and methodology, 2012, p. 13

[52] United Nations Office on Drugs and Crime, Global Report on Trafficking in Persons, 2014, p.29

[53] United Nations Office on Drugs and Crime, Global Report on Trafficking in Persons, 2014, p.33

[54] United Nations Office on Drugs and Crime, Global Report on Trafficking in Persons, 2012, p. 7

[55] https://humantraffickinghotline.org/states

[56] (https://www.theguardian.com/law/2016/jul/10/modern-slavery-on-rise-in-uk) (http://ind.pn/2mZXslD)

[57]https://www.state.gov/j/tip/rls/tiprpt/countries/2016/258784.htm

[58] http://timesofindia.indiatimes.com/india/almost-20000-women-children-trafficked-in-india-in-2016-govt-report/articleshow/57569145.cms

[59] https://www.theguardian.com/global-development/2015/apr/28/child-trafficking-india-domestic-labour-chhattisgarh

[60] http://indianexpress.com/article/india/india-others/the-numbers-story-a-human-trafficking-cases-rise-convictions-come-down/

[61] https://www.globalslaveryindex.org/findings/

 

কোন মন্তব্য নেই

পোস্ট

হিন্দু ধর্মগ্রন্থে গোবধ ও গোমাংস

  হিন্দু ধর্মগ্রন্থে গোবধ ও গোমাংস ভোজনের প্রমাণ || ১|• শ্রাদ্ধে অতিথিদের গোমাংস ভক্ষন করালে পূর্বপুরুষ ১ বছর স্বর্গসুখ পেতে পারে, এই উপদেশ ...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.